পয়ন্তপ Bd fruit’s feature and nutrition quality: লটকনের খাদ্য-শক্তি কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ পয়ন্তপ bd fruit’s feature and nutrition quality

July 29, 2019

লটকনের খাদ্য-শক্তি কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ

লটকনের খাদ্য-শক্তি কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ





লটকনের খাদ্য-শক্তি কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ




সর্ব কালের চাহিদা বিমুখ লটকন ফল কালের আবর্তে এখন অধিক চাহিদা সম্পন্ন ও ব্যাপক লাভজনক অর্থকরী ফসল হিসাবে বিভিন্ন দেশে অত্যধিক গুরুত্ব বহন করছে।


প্রতি ১০০ গ্রাম  লটকনে  কোয়ায়( Burmese grape ) পুষ্টিগত মান
খাদ্যগুণ
92 kcal
প্রোটিন
1.42 g   
ভিটামিন-বি১
10.04 mg
ভিটামিন বি২
0.20mg
ভিটামিন সি
178 mg
ফ্যাট
0.45 g
ক্যালসিয়াম
9 g   
পটাশিয়াম
177 mg  
শর্করা
137 mg
লোহা
100 mg
জলীয় অংশ
35.6 g
আয়রন
5.34 mg  
এছাড়াও লটকনে আছে কার্বোহাইড্রেট, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস সোডিয়াম, ক্রোমিয়াম




























এক সময়ের অবহেলিত অপ্রচলিত অনাদরের ফল লটকন এখন বাংলাদেশের অতি আদরের সুপরিচিত আকর্ষণীয় মুখরোচক জনপ্রিয় ফল। দিন দিন ফলটির জনপ্রিয়তা বেড়েছেই যাচ্ছে, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে লটকন চলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। লটকনের ব্যাপক চাহিদা বিদেশের বাজারেও। যার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কাচা অবস্থায় সবুজ পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে, ফলটি ছোট আকৃতি, র্মাবেলের মত গোলাকার; ফলের খোসা পুরু ও নরম। পাকা লটকনের উপরের রং হলুদ ভিতরে খাদ্য অংশটুকু সাদা আর বীচি অনেকটা মেরুন কালারের। আকারে ছোট ফলটি দেখতে খুবই সুন্দর। প্রতি ফলে দুই থেকে চারটি করে বীজ থাকে। লটকন খোসা ফেলে সরাসরি খেতে হয় তবে জ্যামও তৈরি করা যায়। লটকনের বীজের গায়ে যে রসালো অংশ থাকে ঐ রসালো অংশটুকুই ভক্ষণীয়।

লটকনের খাদ্য-শক্তি কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ

বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana, ইংরেজি নাম Burmese grape, বাংলাদেশের স্থানীয় অনেক নাম লটকন বা লটকা। ফলটি Phyllanthaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। লটকনের আদি বাস পশ্চিম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়ার, ভারত ও বাংলাদেশে লটকনের উৎপাদন অনেক বেশি। লটকন নামটি এসেছে লংগানের অপভ্রংশ থেকে।স্থানীয় ও বন্য অনেক জাত লটকন থাকলেও বাংলাদেশে চাষের অনুমোদিত জাত হল বারি লটকন-১। বাংলাদেশের সর্বত্র এই জাতের লটকন চাষের জন্য উপযোগী।

অম্লমধুর ফল লটকন। হলুদ বর্ণে গোলাকার আকৃতির এক সময়ের টক বা টক-মিষ্টি বুনো ফলটি এখন আমাদের দেশ ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশের জনপ্রিয় ফল। নানা রকম ফলের ভিড়ে আজও লটকন ফলের পুষ্টিগুণের কথা অনেকের অজানা। টক-মিষ্টি স্বাদের ফল লটকন ছোট-বড় সবার প্রিয়। লটকন বর্ষাকালীন ফল।

লটকন ফল খাদ্য-শক্তির ভালো উৎস। দৈনন্দিন কাজ করার জন্য দেহকে সক্রিয় রাখতে যে খাদ্য-শক্তির প্রয়োজন হয় তা পাওয়া যায় লটকন থেকে। লটকনের খাদ্য-শক্তি কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি এছাড়াও আছে ভিটামিন-বি১ ও বি২, শর্করা, প্রোটিন, আয়রন, লোহা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্রোমিয়াম ও চর্বি।

লটকন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত তাই লটকনের অনেকগুলো নাম। নামগুলো হল লটকল, লটকা, লটকো, নটকো,বুবি, বুগি হাড়ফাটা, ডুবি, কানাইজু, লটকাউ, কিছুয়ান ইত্যাদি। লটকল জাতভেদে টক ও টক-মিষ্টি উভয় স্বাদের হয়ে থাকে।

মার্চ মাসের দিকে লটকন গাছে ফুল আসে জুন-জুলাই মাসে ফল পরিপক্ব হয়, ফল পেকে খাওয়ার উপযুক্ত হয় আগস্ট মাসে তখন লটকন দেশের বিভিন্ন স্থানে হাট-বাজারে-ভ্যানে সব জায়গায় পাওয়া যায়।

উন্নত জাতের লটকন লাভজনক ফসল বলে এই ফল চাষের জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের নরসিংদীতে লটকনের ফলন বেশি, নরসিংদীর লটকন দেখতে বড় ও খেতেও সুস্বাদু তাই নরসিংদীর লটকনের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এ ছাড়া গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম, সিলেট, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, লালমনিরহাট—এসব জেলায়ও বাণিজ্যিকভাবে লটকনের চাষ করা হচ্ছে।

লটকনের পুষ্টিগুণের কথা আজ আর কারো অজানা নয়। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খাদ্য-শক্তি এছাড়াও আছে নানারকম খনিজ উপাদান। দিনে দুই থেকে তিনটি লটকন খেলে মানুষের এক দিনে ভিটামিন-সি এর চাহিদা পূরণ হয়।

লটকনে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এনজাইম যা দেহ গঠন ও কোষকলার সুস্থতায় সহায়তা করে। এই সব উপাদান মানব দেহ সুস্থ রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।

লটকনের খাদ্য-শক্তি কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ




লটকনে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে ও হৃদরোগ প্রতিরোধে করতে সহায়তা করে। লটকনে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি থাকায় দেহের পানির ঘাটতি অনেকটা পূরণ করতে পারে। এই ফলের বীচি গনোরিয়া রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

লটকনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় দাঁত, মাড়ি ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধ করে সুস্থ এবং সবল রাখে, বমি বমিভাব ও মানসিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে, এই ফলে আছে আয়রন যা হাড় ও রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক রাখে জন্য বিশেষ উপকারী।

শুধু লটকনের ফলে নয় গাছ ও পাতায় রয়েছে ঔষধি গুণ। মানসিক চাপ কমায় ও ডায়ারিয়া দূর করতে লটকনের পাতার গুঁড়া খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এর পাতা ও শিকড় খেলে পেটের পীড়া ও পুরান জ্বর ভালো হয়ে যায়। লটকনের গাছের ছাল ও পাতা খেলে চর্মরোগ দূর হয়।

লটকনের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ থাকা সত্যেও একদিনে বেশি লটকন না খেয়ে প্রতিদিন পরিমাণ মত খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদগণ। কারণ বেশি খেলে ক্ষুধা মন্দা দেখা দিতে পারে।

লটকন গাছের ছাল ও বীচি থেকে রং তৈরি করা হয়, এই রং রেশম সুতা রং করতে ব্যবহার করা হয়।

লটকনের খাদ্য-শক্তি কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ




বনে জঙ্গলে অপরিচিত জংলি ফল এখন লাভজনক অর্থকরী ফল।লটকন গাছের বাগানের মাটির পুষ্টির সুষমতা আর যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তা হলে গাছের গোঁড়া থেকে প্রধান কান্ডগুলোতে প্রচুর ফলন হয়ে থাকে। গাছের গোঁড়া থেকে ছোট ছোট কাণ্ডের ডগা পর্যন্ত ধোকায় ধোকায় ফল ধরে। বিনা মূলধন ও বিনা পরিশ্রম এত লাভজনক অর্থকরী ফল দেশের আর কোনটা নয়।

বীজ ও কলম-পদ্ধতি এই দুই ভাবে লটকনের বংশবিস্তার করা হয়ে থাকে। লটকন ভক্ষণকারী পাখির বিষ্টা থেকে লটকন ফল বেশী বংশ বিস্তার ঘটে। মাটিতে বীজ পড়লেই চারা গজিয়ে যায়। লটকনের স্ত্রী ও পুরুষ গাছ আলাদা হয়। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলে পুরুষ গাছ বেশি হয় এবং ফল আসতে দেরি হয় আর কলম-পদ্ধতি খুব দ্রুত ফল পাওয়া যায়। কলম-পদ্ধতির আরও সুবিধা হল গাছ খাটো হয় তাই ফল তুলতে সহজ হয়।একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে প্রায় ১০০–১৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়।

লটকন চাষের জন্য বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া বেশ উপযোগী। পানি জমে না এমন উঁচু স্থানের, টিলা ও লালমাটি লটকন চাষের জন্য উপযোগী ভূমি। লটকন গাছ প্রায় ৯-১২ মিটার লম্বা, অনেকটা বেটে কাণ্ড ও ঝোপালো হয়, কাঠ নিম্নমানের। ঘন ঝোপ-জঙ্গলে ও বাঁশঝাড়ের ছায়াযুক্ত স্থানে লটকনের ফলন ভাল হয়। রোপণের তিন বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু হয় টানা প্রায় ত্রিশ বছর ফল হয়।


তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট ও বই থেকে সংগৃহীত




No comments: