পয়ন্তপ Bd fruit’s feature and nutrition quality: আনারসের বেটা-ক্যারোটিন চোখের রেটিনা ভালো রাখে পয়ন্তপ bd fruit’s feature and nutrition quality

October 17, 2019

আনারসের বেটা-ক্যারোটিন চোখের রেটিনা ভালো রাখে

আনারসের বেটা-ক্যারোটিন চোখের রেটিনা ভালো রাখেআনারসের বেটা-ক্যারোটিন চোখের রেটিনা ভালো রাখে

আনারসের বেটা-ক্যারোটিন চোখের রেটিনা ভালো রাখে

অম্ল মধুর স্বাদ ও লোভনীয় সুগন্ধের জন্য আনারস অনেকের কাছেই কদরের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আনারস খুবই জনপ্রিয় ফল। এই ফল রসালো, টক ও টক-মিষ্টি এবং তৃপ্তিকর। এই ফলটির সবচেয়ে বড়গুণ হল ঔষধিগুণ। আনারস আছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, বিটা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, রাইব্ফ্লোভিন, থিয়ামিন, ফোলেট, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, মিনারেল, লৌহ ও কপার, এছাড়াও রয়েছে
প্রচুর পরিমাণ আঁশ ও ক্যালোরি তবে কলস্টেরল ও চর্বিমুক্ত। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আনারস মহৌষধ।


আনারসের বৈজ্ঞানিক নাম Anarus comosus (L.) Merr, ইংরেজি নাম Pineapple, আনারসের আর নাম Anannas, Ananus, Bahunetraphalam, আমাদের দেশের স্থানীয় নাম আনারস। ফলটি Bromeliaceae পরিবারের সদস্য। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে এই ফলের আদিবাস। গবেষকদের ধারণা ব্রাজিল আনারসের উৎপত্তিস্থল। বর্তমানে বিশ্বের ক্রান্তীয় অঞ্চলের সর্বত্রই এই ফলের ব্যাপক চাষে হচ্ছে। আনারস উৎপাদনে লিডিং দেশগুলোর হচ্ছে কোস্টারিকা, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ইন্ডিয়া।


১৫১৩খ্রীস্টাব্দে আনারসের গাছ ব্রাজিল থেকে পর্তুগিজরা মালাবার উপকূলে আমদানি করে। পরবর্তীতে সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকা ও পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে আনারসের চাষ প্রবর্তিত হয় এবং কালক্রমে যুক্তরাষ্ট্র(হাওয়াই রাজ্য), দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায়, ভারত, ইন্দো-চীন, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ আনারসের চাষ বিস্তার লাভ করে। অনুমান করা হয় ১৫৪৮ সালের দিকে আনারস আমাদের এই অঞ্চলে আসে। সারা বিশ্বে প্রায় ৯৫ জাতের আনারস উৎপন্ন হয়। আনারস এক প্রকারের গুচ্ছ-ফল।


সারা বিশ্বে প্রায় ৯৫ প্রজাতির আনারস উৎপন্ন হলেও বাংলাদেশে চার প্রজাতির আনারস চাষ করা হয়। হানিকুইন, জায়ান্টকিউ, ক্যালেন্ডুলা ও ঘোড়াশাল। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটে জন্মে হানিকুইন জাতের আনারস। হানিকুইন জাতের আনারসের চোখ সূচালো ও উন্নত এবং গড় ওজন প্রায় ১কেজি; হানিকুইন ডলডুপি হিসেবে পরিচিত। হানিকুইন জাতের পাকা আনারসের খোসা সোনালি-হলুদ, স্বাদে বেশ মিষ্টি ও শাঁস কম আঁশযুক্ত। জায়ান্টকিউ জাতের আনারস জন্মে মধুপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামে। জায়ান্টকিউ জাতের আনারসের চোখ প্রশস্ত ও চেপ্টা এবং গড় ওজন প্রায় ২কেজি। জায়ান্টকিউ জাতের আনারস আকারের সবচেয়ে বড় হয়। এ জাতের আনারস কাঁচা অবস্থায় গাঢ় কালচে-সবুজ থাকে আর পাকালে কমলা-হলুদ রং হয়; গন্ধযুক্ত, আঁশবিহীন, স্বাদ অম্লমধুর। ক্যালেন্ডুলা জাতের পাকা আনারসের রং লালচে এবং ঘিয়ে সাদা, খেতে বেশ মিষ্টি, চোখ প্রশস্ত, গড় ওজন ১-১.২৫ কেজি। ঘোড়াশাল জাতের আনারস জন্মে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে। ঘোড়াশাল জাতের পাকা আনারসের রংও লালচে এবং ঘিয়ে সাদা। এছাড়াও আমাদের দেশে কিছু দেশী জাতের আনারস উৎপন্ন হয় যা খেতে বেশিরভাগই টক।


আনারস সাধারণত বছরে দুই বার উৎপন্ন হয়। আনারস গাছে ফুল আসে গ্রীষ্মে কালে আর ফল পাকে বর্ষা শেষে। প্রথম ও প্রধান ফল পাওয়া যায় আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের, যেসব গাছে দেরিতে ফুল আসে সেসব গাছে শীতের সময় ফল পাকে। শীতকালের আনারস সাধারণত টক ও ছোট হয় আর বর্ষাকালের আনারস থাকে রসে টইটম্বুর, খেতে হয় মিষ্টি ও সুস্বাদু।

আনারসের বেটা-ক্যারোটিন চোখের রেটিনা ভালো রাখে
বাংলাদেশের প্রায় জেলাতেই আনারস উৎপন্ন হয়। আনারস টাঙ্গাইল (মধুপুর), চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট (শ্রীমঙ্গল) এবং মৌলভীবাজার জেলায় ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়, এসব অঞ্চলে আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। নরসিংদী, গাজীপুর, কুমিল্লা, দিনাজপুর জেলাতেও আনারসের আবাদ হয়। ঋতু, অঞ্চল ও জাতভেদে আনারসের পুষ্টিগুণের তারতম্য হয়ে থাকে। প্রায় সব ঋতুতে আনারস পাওয়া যায় তবে আনারস বর্ষাকালীন ফল।




জ্বরে বিশেষ ওষুধ ও পথ্য হচ্ছে আনারস। আনারসের পুষ্টি ভেষজগুণ সমৃদ্ধ এবং রসালো ফল। পাকা আনারসের মিষ্টি গন্ধ অনেকের কাছে লোভনীয়। আনারসের জুস, স্লাইস, এসিড, স্কোয়াশ, সিরাপ, জ্যাম, জেলি, আনারসসত্ত্ব, ভিনেগার, সাইট্রিক এসিড, ক্যালসিয়াম সাইট্রেট, অ্যালকোহল বিশ্বনন্দিত। আনারসে ভিটামিন সি থাকায় জ্বর, জন্ডিস, সর্দি-কাশি বা ভাইরালের মহৌষধ। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে আনারস খুবই উপকারী। তবে আনারস যতটা সম্ভব টাটকা খাওয়াই ভালো।


আনারস টক, টক-মিষ্টি স্বাদযুক্ত সুস্বাদু ফল। ঔষধিগুণের একটি বড় উৎস হল আনারস। পাকা আনারস পাচক, বর্ধক, বলকারক, কফ-পিত্ত ও ঘর্ম-কারক আর কাঁচা আনারস গর্ভপাতকারী। পাকা টাটকা আনারসের রসে ব্রোমিলিন নামক জারক রস থাকে যা পরিপাক ক্রিয়ার সহায়ক এবং পাণ্ডুরোগের কল্যাণকর। ক্রিমির উপক্রম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, কচি ফলের শাঁস ও পাতার রসের সাথে মধুর মিশিয়ে খেলে।


বিশ্বে উৎপাদিত আনারসের বেশির ভাগই প্রক্রিয়াজাত করা হয়। আনারস টিনজাত ফল হিসেবেও সংরক্ষণ করা হয়, বিদেশের বাজারে এই ধরনের আনারসের চাহিদা অনেক বেশি। আনারস দিয়ে স্কোয়াশ, রস, জ্যাম, জেলি আর ভিনেগার, অ্যালকোহল, সাইট্রিক এসিড তৈরি করা হয়। এছাড়া আনারস দিয়ে সালাদ ও বিভিন্ন রকম খাবার রান্না করা হয়। আনারসের থাকে সর্বাধিক ১% সাইট্রিক এসিড।


বিশেষজ্ঞদের মতে আনারস অন্য ফলের মত প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সপ্তাহের দুই থেকে তিন দিন নিয়ম করে নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু প্রতিদিনের ফলের খাদ্যতালিকায় আনারস না রাখাই ভালো। আমার মত যারা আনারস প্রেমিক তাদের জন্য এটি দুঃসংবাদ কিন্তু আনারসের বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে যার জন্য আনারস খুবই নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।


সব সময় ফলের উপকারিতা প্রথমে তুলে ধরা হয় কিন্তু আনারসের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকারক দিক আছে তাই আমি আনারসের ক্ষতিকারক দিকগুলোই প্রথম তুলে ধরছি-


আনারসের ক্ষতিকারক দিকসমূহ

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল নালীর কাছে পৌঁছানোর পর আনারস ফল অ্যালকোহলে পরিণত হয়, একারণে মানুষের দেহে বাতের ব্যথা হতে পারে। ব্রমিলেইন নামক উপাদান আছে আনারসে যা দেহের প্রোটিনের পরিমাণ নষ্ট করার জন্য দায়ী থাকে। এই ফল দেহে অ্যালার্জি ও ডার্মাটাইটিস সংক্রমণ করে। আনারস খাওয়ার পরে অনেকের অ্যালার্জি (চুলকানি, ফুস্কুড়ি, ঠোঁট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি) হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ হচ্ছে অ্যান্টিকনভালসেন্ট ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার সময়কালীন আনারস না খাওয়ার; কারণ এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আনারসে গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, গর্ভাবস্থায় এই ফল খেতে বারণ করা হয়। ফলটিতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, তাই ব্লাড সুগার বেড়ে যায়, আছে সুক্রোজ এবং ফ্রুক্টোজ যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। আনারস এসিডিক, তাই খালি পেটে আনারস খেলে পেটে ব্যথা হতে পারে। দাতে জিংজাইভেটিভস ও কেভিটিসের সমস্যা থাকলে আনারস না খাওয়াই ভালো।


আনারসের উপকারী দিকসমূহ

আনারস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল। আনারসের আছে এক প্রকার এনজাইম যা ব্যথানাশক হিসাবে কাজ করে। ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিলের মানুষের কাছে আনারস হচ্ছে ঔষধ। আনারসের বেটা-ক্যারোটিন চোখের রেটিনা ভালো রাখে এবং গলা ব্যথা, সর্দি ও জ্বর হলে আনারস খায়। গলা ব্যথা কমায় আনারস।
আনারসের বেটা-ক্যারোটিন চোখের রেটিনা ভালো রাখে


আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন নামক উপাদান যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং অ্যাসপিরিনের বিকল্প হিসেবেও কাজ করে। ব্রোমেলিন বদহজম দূর করে হজমশক্তি বাড়াতে এবং সর্দি-কাশির সাড়াতে সাহায্য করে, ফাইবার বা খাদ্যআঁশ পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে, হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়, রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে।


আনারসে আছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। ক্যালসিয়াম দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা করে এবং হাড় গঠন করে আর ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে মজবুত করে। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন যা ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন রোগটি চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় ফলে মানুষ ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যায়।


আনারসে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ লবণ, আছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম। আনারসে কোলেস্টেরল ও ফ্যাট পরিমাণ খুবই কম কিন্তু ফাইবার বা আঁশযুক্ত তাই ওজন কমাতে ফলটি খুবই উপকারী। আনারসের কোলাজেন দ্রুত ক্ষত বা ঘা শুকাতে সাহায্য করে। এই ফলে আরো আছে অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড নামক উপাদান, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।


আনারস দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়, ফলে রক্তবাহী নালীর (শিরা-ধমনি) দেয়ালে রক্ত জমতে না পারার কারণে রক্ত সারা শরীরে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে। হৃৎপিণ্ড মানব দেহে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে এবং রক্ত পরিষ্কার করে হৃৎপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে আনারস।


আনারসে আছে ভিটামিন-এ, ব্রোমেলিন, ফ্ল্যাভোনয়েডের, বিটা-ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই সব উপাদান দেহের ক্ষতিকর টক্সিন উপাদানগুলোকে দেহ থেকে বের করে দেয় এবং দেহে ক্যান্সার সেল জন্মানোর প্রক্রিয়াতে বাধা প্রধান করে থাকে। নিয়ম করে নিয়মিত আনারস খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকির আশঙ্কা কম থাকে। ফ্রি-র‍্যাডিকেলের বিরূপ প্রভাবে মানব দেহে হৃদরোগ, ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আনারসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি দেহকে ফ্রি-রেডিকেল মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।


আনারসের পাতা থেকে তৈরি করা হয় সুতা ও মোম। ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে পাতার আঁশ থেকে পিনা নামক কাপড় তৈরি করে। আনারসের খোসা গবাদিপশুর খাদ্য।


আনারসের গাছের মূল ছোট, ঘন সন্নিবিষ্ট লম্বা ও পুরু পাতায় আচ্ছাদিত থাকে। বিভিন্ন ধরনের চারার মাধ্যমে আনারসের বংশবিস্তার হয়। পার্শ্ব চারা, গোঁড়ার চারা আর পাতার কক্ষ থেকে পাওয়া চারা বেশি ভালো। আনারস চাষের জন্য উপযোগী হচ্ছে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি এবং পানি দাঁড়ায় এমন উঁচু জমি।



তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট ও বই থেকে তথ্য-সংগৃহীত



No comments: