পয়ন্তপ Bd fruit’s feature and nutrition quality: কালোজাম আকারের চেয়ে পুষ্টিগুণে ওজনে ভারী পয়ন্তপ bd fruit’s feature and nutrition quality

July 6, 2019

কালোজাম আকারের চেয়ে পুষ্টিগুণে ওজনে ভারী

কালোজাম আকারের চেয়ে পুষ্টিগুণে ওজনে ভারী





কালোজাম আকারের চেয়ে পুষ্টিগুণে ওজনে ভারী 

শুধুমাত্র রং কালো বলে আমরা ফলটিকে কালোজাম বলি। ফলটির কেবল আবরণই কাল কিন্তু ভিতরটা সম্পূর্ণ রক্তের মতো লাল। এই ফলটির লাল টকটকে রসে টইটুম্বুর থাকে, কাজও করে রক্তের তাই কালোজামের পুষ্টিগুণ অতুলনীয়।
কালোজামের আকারের চেয়ে পুষ্টিগুণের ওজন বেশি। এই ফলটি শুধু মানুষের খাদ্য তা না ফলটি পাখিরও খাদ্য।

প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পুষ্টিগত মান
শক্তি
২৫১ কিজু (৬০ kcal)
শর্করা
15.56 g
স্নেহ পদার্থ
0.23 g
প্রোটিন
0.72 g
ভিটামিন এ
3 IU
থায়ামিন (বি১)
(1%) 0.006 mg
রিবোফ্লাভিন (বি২)
(1%) 0.012 mg
ন্যায়েসেন (বি৪)
(2%) 0.260 mg
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড(বি৫)
(3%) 0.160 mg
ভিটামিন বি৬
(3%) 0.038 mg
ভিটামিন সি
(17%) 14.3 mg
ক্যালসিয়াম
(2%) 19 mg
লোহা
(1%) 0.19 mg
ম্যাগনেসিয়াম
(4%) 15 mg
ফসফরাস
(2%) 17 mg
পটাশিয়াম
(2%)  mg
সোডিয়াম
(1%) 14 mg
পানি
83.13 g

সূত্র :  ছকটি নেট থেকে সংগৃহীত 

বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium cumini, ইংরেজি নাম Black Berry, Java plum, Jambul, Malabar plum, আমাদের দেশের স্থানীয় নাম কালোজাম। ফলটি Myrtaceae পরিবারভুক্ত। ভারতবর্ষ জামের আদিবাস। ভারতবর্ষ থেকেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে কালোজাম নামে পরিচিত হলেও ফলট বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- ড্যামসন প্লাম, জামব্লাং জাম্বুলা, পর্তুগিজ প্লাম, কালো প্লাম, জাম্ভুল, ডুহাট প্লাম, জাম্বু, জাভা প্লাম, জামুন, কালোজাম, জাম্বোলান প্লাম ইত্যাদি। কানাড়া ভাষায় একে বলা হয় নেরালে হান্নু, মালায়ালাম ভাষায় নাভাল পাজহাম, তেলেগু ভাষায় নেরে-দু পাণ্ডু এবং তামিল ভাষায় নার্ভা পাজহাম।



আমাদের দেশে যে ফলগুলো সবার কাছে খুবই সমাদৃত তাদের মধ্যে একটি ফল হল কালোজাম। ছোট কিংবা বড় সবার কাছেই কালোজাম খুব কদরের। ফলটির আয়তাকার প্রায় ১ থেকে ২.৫ সেন্টিমিটার লম্বা। এই ফলটি অনেকটা লম্বাটে ডিম্বাকৃতি। ফলের বেশির ভাগটাই বীজ বা বীচি; আবরণ খুব পাতলা ও মসৃণ। জন্মানোর পর থেকে পাকা আগ পর্যন্ত গাড় সবুজ রঙের থাকে, পরিপুষ্ট হওয়ার পর ধীরে ধীরে রং পরিবর্তন হতে থাকে প্রথম হাল্কা গোলাপি তারপর ধীরে ধীরে কালো রং ধারণ করতে থাকে। পুরোপুরি পাকলে কাল বা কালচে বেগুনি রঙের হয়ে যায়, তাই আমরা কালোজাম বলি। কালোজাম একটি রসালো ফল। হালকা টক মিষ্টি সুস্বাদু এই ফলটি ফলের মধ্যে বলা চলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ফলটি খাওয়ার পর জিহ্বা রঙিন হয়ে যায়। কালোজাম বর্ষাকালীন ফল।


কালোজাম আকারের চেয়ে পুষ্টিগুণে ওজনে ভারী




কালোজাম পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। কালোজাম রস অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে আছে ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, লৌহ ও ভিটামিন সি। পাকা জাম দিয়ে জ্যাম জুস ও নানা রকম সংরক্ষিত খাবার তৈরি করা হয়। ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ ফল হল কালোজাম।



আমাদের দেশে জাম গাছে মুকুল আসে মার্চ মাসে এবং পরপিক্ক হয় জুন-জুলাই মাসে। মূলত জামের ভরা মৌসুম আষাঢ় মাসে। আমাদের দেশে প্রধানত দুই জাতের জাম পাওয়া জায়। তা হলো ক্ষুদি- আকারে ছোট, শক্ত ও অপেক্ষাকৃত কম মাংস, রসের রং খুব গারো, স্বাদে একটু টক আর মহিষে- আকারে বড়, নরম ও বেশি মাংস, রসের রং অপেক্ষাকৃত হাল্কা, তুলনামূলক বেশি মিষ্টি। খোসা নেই বলে এটি খাওয়া খুবই সহজ, খোসা ছাড়াবার ঝামেলা নেই শুধু মুখে দিতে হয়।



আয়ুর্বেদিক ও হেকিম চিকিৎসায় কালোজাম ব্যবহার করা হয়; বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য চীন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশে জামের ব্যবহার হয়ে আসছে। উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র, হজমের সমস্যা, মাড়ির প্রদাহ ইত্যাদি রোগে জাম গাছের ছাল, পাতা ও জামের বীচি দিয়ে নানান রোগের আয়ুর্বেদী চিকিৎসা করা হয়। এক কথায় বলা যায় জাম গাছের পাতা ও ফলের বহুবিধ ব্যবহার ও উপকারিতা রয়েছে।



যেকোনো ফল থেকে কালোজামে অনেক বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এক কথায় বলা যায় কালোজাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। মানব দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই দরকার। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানব দেহ ভেতর থেকে ফিট রাখে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

কালোজাম আকারের চেয়ে পুষ্টিগুণে ওজনে ভারী



কালোজামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় মানুষের দেহে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে, ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। কালো জামে থাকা ভিটামিন সি ও বি, ফাইবার, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় বলে হার্ট ভাল থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কালো জামে আছে মানব দেহের বিভিন্ন উপকারী উপাদান। যেমন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, সোডিয়াম যা মানব দেহে সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। কালোজাম আছে ফ্রুকটোজ, ডেক্সট্রোজ ও গ্লুকোজ যা মানব দেহে কাজ করার শক্তি যোগায়।




পুষ্টিবিদদের মতে, কালো জাম রক্ত পরিষ্কার রাখে, ত্বক ভালো থাকে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, চুল পড়া রোধ করে, দাঁত ভালো রাখে, সর্দি কাশি কমাতে সাহায্য করে, অ্যালসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, মুখে অরুচি ও বমিভাব দূর করে, রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদপিণ্ড ভালো রাখে, রক্তের লোহিত কণিকা গঠনের সহায়তা করে এছাড়া দেহের দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দেহের সর্বত্র অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।


কালোজাম ও জামের বীচি বহুমূত্র রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। কালো জাম ব্লাড সুগার লেভেল কম রাখতেও সাহায্য করে। কালো জামকে ডায়াবেটিস প্রতিরোধকও বলা হয়ে থাকে।



বাংলাদেশে সর্বত্রই জাম গাছের দেখা মেলে।তবে গাজীপুর, সিলেট, যশোর, পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, নোয়াখালীতে, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও ঢাকা উৎপাদন বেশি হয়। আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে কালোজামের চাষ খুব একটা করা হয়না। শখের বশে অনেকে বাড়ির আশপাশের জমিতে, রাস্তার ধারে এবং অন্য ফলের বাগানে জামগাছ লাগিয়ে থাকে। জামগাছ বড় আকারের বৃক্ষ; উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়া জাম ফলের জন্য উপযুক্ত সময়। জাম কাঠ উৎকৃষ্ট মানের কাঠ, সহজে পানিতে পচে না। আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, নৌকা ও কুটির শিল্পের কাজে জাম কাঠ ব্যবহার করা হয়। জাম গাছ পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে।


No comments: