দেহের বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করাই জামরুলের কাজ
ভেষজগুণ সমৃদ্ধ সাদামাটা নিরীহ ফল জামরুল ফল। জামরুলের মতো এমন গোবেচারা সাদাসিধে ফল নেই বললেই চলে। চুঙ্গাকৃতি ফলটি ফাঁপা নয়, দেখতে খুবই চমৎকার শুধু খেতে একটু পানসে।
প্রতি ১০০ গ্রাম জামরুলের পুষ্টিগত মান | |
ক্যালরি শক্তি | 56 kcal |
0.5 - 0.7g | |
0.1 mg | |
0.5 mg | |
3 mg | |
ফ্যাট | 0.2 - 0.3 g |
খাদ্যআঁশ | 1.1- 1.9 g |
29 – 45.2 mg | |
কার্বোহাইড্রেট | 14.2 mg |
4 mg | |
11.7 – 30 mg | |
34.1 mg | |
সোডিয়াম | 34.1 mg |
কপার | 0.01 mg |
সালফার | 13 mg |
ক্লোরিন | 4mg |
আমিষ | 0.7mg |
আয়রন | 0.45 -1.2 mg |
চর্বি | 0.2 mg |
খনিজ পদার্থ | 0.3g |
খাদ্যশক্তি | 39 kcal |
ক্যারোটিন | 141 mg |
জলীয় অংশ | 45.5 - 89.1% |
এছাড়াও জামরুলে সামান্য পরিমাণে আছে ক্যারোটিন, থায়ামিন, নাইয়াসিন, এ্যাসকোরবিক এসিড। |
পুষ্টিগত মানের তথ্য নেট থেকে সংগৃহীত
জামরুল ফলের বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium samarangense, ইংরেজি নাম Eugenia javanica, বাংলাদেশের স্থানীয় নাম জামরুল। ফলটি Myrtaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। জামরুল ফল এই অঞ্চলে প্রথম নিয়ে আসে আন্দামান-নিকবর দ্বীপপুঞ্জের পর্তুগিজ নাবিকগণ। আঞ্চলবেধে ফলটি নাম অনেক। যেমন- জামরুল, আমরুজ, লকট নামে পরিচিত আর নরসিংদীতে পরিচিত ছিফতফল নামে।
জামরুল রসালো ও আঁশ-বিহীন পুষ্টিগুণ-সমৃদ্ধ ঔষধি ফল। ফলটি স্বাদ পানসে। জামরুল পানসে স্বাদের হলেও খেতে অনেকটা ভিন্ন স্বাদযুক্ত। ফলের প্রায় পুরোটাই ভক্ষণ-যোগ্য। জামরুল গাছ ফাকা জায়গায় রোদে থাকলে ফল খেতে কিছুটা মিষ্টি হয় আর গাছ ছায়ায় থাকলে খেতে সাধারণত পানসে হয়ে থাকে। ফলটির আবরণ পাতলা, তেলতেলে ও মসৃণ। ফলের ওজন প্রায় ৪০-৪৫গ্রাম হয়ে থাকে। জামরুল সাদা, লাল, হালকা সবুজ, গোলাপি রং-এর হয়ে থাকে। ফলের মাঝখানে একটি বীজ থাকে। এই ফল অন্য ফলের তুলনায় অনেকটা সহজলভ্য।
জামরুল যখন পাকে তখন আমাদের দেশের প্রচণ্ড গরম থাকে, এই গরমে পানসে স্বাদ জামরুল ফলই এক নিমিষে মানবদেহে স্বস্তি দান করতে পারে। জামরুল ফল ফ্রিজে রেখে হাল্কা ঠাণ্ডা করে সামান্য লবণ দিয়ে খেলে পুরো শরীর এক নিমিষে ঠাণ্ডা হয়ে যায় অসহনীয় প্রচণ্ড গরমে। জামরুল স্লাইস করে কেটে হাল্কা চিনি ছিটিয়ে দিয়ে ফ্রিজে রেখে হাল্কা ঠাণ্ডা করে খাওয়ার স্বাদের তুলনা হয় না। অস্বস্তিকর গরমে হাল্কা ঠাণ্ডা জামরুল ফল অনেকটা স্বস্তি-দায়ক। যারা কখনো এভাবে জামরুল খান নাই তারা একবার খেয়ে দেখতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীরা হয়তো চিনি খেতে পারবেন না কিংবা প্রেশারের রোগীরা লবণ খেতে পারবেন না কিন্তু ফ্রিজ থেকে বের করে খেয়ে দেখবেন এই ফল অন্যরকম তৃপ্তি ও স্বস্তি দান করে প্রচণ্ড গরমে।
জামরুল ভিটামিন বি-২ সমৃদ্ধ ফল। ফলটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-২, লৌহ, আমিষ, লবণ, ক্যারোটিন এবং প্রায় সকল পুষ্টিগুণ উপাদান, যাকে বলা হয় সকল গুণে গুণান্বিত।
জামরুল মানুষের দেহে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধতে বাধাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়ায়। জাম্বোসাইন নামক একধরনের ক্ষারজাতীয় উপাদান স্টার্চকে চিনিতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সহনীয় পর্যায় থাকে; আর এব্যাপারে দক্ষ হল জামরুল। ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে বলে ডায়াবেটিস রোগীর পানি পিপাসা নিবারণে বড় ভূমিকা পালন করে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে জামরুলের বিচি ওষুধের মতো তাৎক্ষণিক কাজ করে।
জামরুলে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকায় হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে জাগরণে তুলনা হয় না। চোখের নিচে ও চারপাশের কালি দূর করতে, মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে, বাত নিরাময়ে, কিডনির বিপাকক্রিয়া সুষ্ঠু রাখতে, লিভারের সুস্থ রাখতে টনিক মত কাজ করে জামরুল ফল। ঘুম না হলে জামরুল খেতে পারেন, খুবই ফলদায়ক।
জামরুলে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান থাকায় ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সম্মিলিত পুষ্টি উপাদান মানব দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে বলে অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে ফলে হ্রাস পায় কার্ডিওভাসকুলার বিষয়ক জটিলতা; এখানে জামরুল ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দুশ্চিন্তা দূর করে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও করোনারি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে জামরুল।
বিষাক্ত উপাদান প্রতিনিয়ত মানব দেহে ঘুরে বেড়ায়। ঝাড়ুদারের মত দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করাই জামরুল ফলের কাজ। জামরুল ত্বকে ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকায়, ছত্রাক-নাশক হিসেবে কাজ করে। সুস্থ থাকতে এবং পুষ্টি-হীনতা কিছুটা দূর করতে প্রতিদিন অন্তত একটি জামরুল খাওয়া উচিত। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
বিশেষ করে বাড়ির আশেপাশে ও পুকুরের ধারে এ ফলের চাষ করা হয়ে থাকে। শখের বশে অনেকে ছাদে টবে জামরুল ফলের চাষ করে থাকে। জামরুল চাষের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু অধিক উপযোগী।
জামরুল ফল ক্রান্তীয় অঞ্চলে ব্যাপক চাষ হয়। জামরুল গাছ বীজ থেকে গাছ হয়, তবে ডাল কেটে পানিতে রাখলে শিকড় গজায়। কলমের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা যায়। জামরুল গাছ মাঝারি আকারের ও গাঢ় সবুজ রং-এর হয়ে থাকে। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং মে-জুনে ফল পাকে। জামরুল ফল বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই চাষযোগ্য। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সামোয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, ভারত ও বাংলাদেশে প্রচুর জামরুল হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে জামরুল ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment