পয়ন্তপ Bd fruit’s feature and nutrition quality: পেয়ারা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধক পয়ন্তপ bd fruit’s feature and nutrition quality

September 3, 2019

পেয়ারা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধক




পেয়ারা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধকপেয়ারা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধকপেয়ারা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধক
পেয়ারা এন্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল সমৃদ্ধ ফল, জনপ্রিয় ফলের মধ্যেও অন্যতম। পেয়ারায় শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকায় বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে পেয়ারা। প্রায় চারটি আপেলের সমান একটি পেয়ারার পুষ্টিগুণ। ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ২২৮ মি.গ্রা. ভিটামিন-সি থাকে। কমলার চেয়ে চারগুণ বেশি পেয়ারায় এবং পাঁচগুণ বেশি পেয়ারার খোসায় ভিটামিন-সি থাকে। পেয়ারায় আঁশ, ভিটামিন-সি, ফোলেট, পটাশিয়াম, ফসফরাস,
ক্যালসিয়াম, আয়রন বা লৌহ, ক্যারোটিনয়েড, নিকোট্রিন অ্যাসিড, ফলিক অ্যাসিড ও বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদি উপাদানে সমৃদ্ধ। পেয়ারা বেরি জাতীয় ফল।

প্রতি ১০০ গ্রাম  পেয়ারার ( Guava ) পুষ্টিগত মান
শক্তি
68 kcal
প্রোটিন
2.6  
ভিটামিন
624  IU        
ভিটামিন সি
228.3 mg
ভিটামিন ডি 
0 IU
ক্যালসিয়াম
18 mg
শর্করা
14 g
ম্যাগনেসিয়াম
22 mg
পটাশিয়াম
417 mg
সোডিয়াম
2 g
ফসফরাস
25 mg
সায়ানোকোবালেমিন
0 µg
লিপিড
1 g
চিনি
9 g
লোহা
1.4 mg
পানি
86.10 g
আঁশ
5.4 g
কোলেস্টেরল
০ mg
খাদ্যতালিকাগত তন্তু
5 g
একক
μg = মাইক্রোগ্রামসমূহ,
mg = মিলিগ্রামসমূহ
IU = আন্তর্জাতিক এককসমূহ



































বৈজ্ঞানিক নাম Psidiun guajava, ইংরেজিতে Common Guava, Marroon Guava (লাল পেয়ারা)আমাদের দেশের স্থানীয় নাম পেয়ারা, গৈয়া, হবরি। ফলটি Myrtiflorae বিভাগের Myrtaceae পরিবারভুক্ত। Psidium গণে পেয়ারার প্রায় ১৫০টি প্রজাতি রয়েছে। পেয়ারার আদি নিবাস আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন উষ্ণ অঞ্চল বিশেষ করে পেরু থেকে মেক্সিকোর যে কোনো স্থান। প্রায় দুই হাজার বছরের পূর্বে পেয়ারা চাষাবাদের অধীনে আসে এবং পরবর্তীতে পর্তুগিজ ও স্প্যানিশদের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হয় পর্তুগীজরা ১৭০০ শতাব্দীর প্রথমদিকে পেয়ারা আনে ভারতে। পরে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে যায় পেয়ারা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো প্রভৃতি অঞ্চলের পেয়ারা বেশি জন্ম। মেক্সিকো, ব্রাজিল, ফিলিপাইন, ফ্লোরিডা, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হাওয়াই, বার্মা, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে পেয়ারার চাষ হয়। পেয়ারার অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে সারা পৃথিবীতে।
পেয়ারা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধকপেয়ারা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধক
পেয়ারা ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ পুষ্টিকর ফল। এই ফল মানব দেহের নানা জটিল রোগের প্রতিষেধক। পেয়ারা ক্যান্সার, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, চোখের দৃষ্টিশক্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য, গর্ভবতী নারীদের সুস্থতা জনিত রোগে ঔষধের মত কাজ করে। এই ফল দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতার রস ক্যান্সার প্রতিরোধক এবং বহুমূত্র, জ্বর, আমাশয়, ব্যথা, সংক্রমণ রোগের ঔষধ হিসেবে বেশ কার্যকর। পেয়ারার বীজে আছে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ পলিআন-সেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও ফাইবার বা আঁশ। আঁশ ও ভিটামিন-সি এর অন্যতম উৎস হল পেয়ারার। পেয়ারায় থাকে ০.৪৮% পটাশিয়াম, ২.৪৫% অম্ল, ৮০-৮৩% পানি, ৯.৭৩% দ্রবণীয় শুষ্ক পদার্থ, ৩.৫০-৪.৪৫% বিজারিত চিনি, ৩.৯৭-৫.২৩% অ-বিজারিত চিনি।

পেয়ারা বীজপূর্ণ মিষ্টি স্বাদের ও কচকচে সু-স্বাদু ফল। পেয়ারা জাতভেদে অঞ্চলভেদে স্বাদ ও আকারের তারতম্য হয়ে থাকে। আমাদের দেশে সাদা ও লাল শাঁসবিশিষ্ট ছোট-মাঝারি-বড় আকার, নাশপাতি আকার, গোলাকার, উপবৃত্তাকার বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন আকারের পেয়ারা হয়। লাল রং-এর পেয়ারা আমাদের দেশে খুব কম দেখা যায়। এই ফলের উপরের অংশ মসৃণ-অমসৃণ উভয় রকমেরই হয়ে থাকে। কাঁচা পেয়ারা সবুজ পাকলে হলুদ রং ধারণ করে, পেয়ারার ভিতরের শাঁস সাদাটে, লাল এবং গোলাপি রং-এর হয়ে থাকে। যেসব পেয়ারার ভিতরের অংশ লাল বা গোলাপি রং-এর হয় সেসব পেয়ারাকে সৈয়দা বা সৈয়দী পেয়ারা বলা হয়। পেয়ারা কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই খোসাসহ খাওয়া যায়। পেয়ারার বীজ বা বীচি ছোট ছোট কিন্তু শক্ত। আমাদের দেশি জাতের পেয়ারায় অনেক বেশি বীচি থাকে এবং আকারে একটু ছোট হয়, উন্নত জাতের পেয়ারায় বীচি কম থাকে আর আকারেও বড় হয়। পেয়ারা দিয়ে শরবত, সালাদ, পুডিং, জেলি, পাউডার, আচার ও আইসক্রিম তৈরি করা হয়। পেয়ারা কেটে ছোট ছোট টুকরো করে অথবা পাতলা পাতলা স্লাইস করে কেটে লবণ মরিচ কাসুন্দি দিয়ে ভর্তা বানিয়ে বিক্রি করা হয় স্কুল-কলেজের সামনে, বাস স্টেশনে, রাস্তা-ঘাটের বিভিন্ন স্থানে।
পেয়ারা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধক



বাংলাদেশের প্রায় বাড়িতেই দু-একটি পেয়ারা গাছ আছে। জুনের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি(আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র মাস)পর্যন্ত পেয়ারার বড়া মৌসুম। আমাদের দেশের সব অঞ্চলেই কমবেশি পেয়ারা উৎপন্ন হয় এবং সারা বছরই পেয়ারা চাষ করা হয়। সাধারণত জুলাই-অগাস্ট মাসেই বেশি হয় দেশি পেয়ারা, সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে বেশি হয় বিচিহীন বারি পেয়ারা-৪। তবে বারি পেয়ারা-৪ সারা বছরই উৎপাদন করা যায়। বারি পেয়ারা-৪ পেয়ারা বীচিহীন এবং নরম হয় বলে বয়স্ক ও শিশুসহ সবাই খেতে পছন্দ করে। বীচি-ওয়ালা পেয়ারার চেয়ে বিচিহীন পেয়ারা বেশি সু-স্বাদু। বারি পেয়ারা-২ এর চেয়ে বারি পেয়ারা-৪ ফলন বেশি হয়। বারি পেয়ারা-৪ সব রকম আবহাওয়াতে হয় বলে পাহাড়ি অঞ্চলসহ সব অঞ্চলেই চাষ করা যায়। তবে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ মাটিতে এ জাতের পেয়ারা বেশি ভাল হয়। বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, গাজীপুর, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি প্রভৃতি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ করা হয়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পেয়ারা উৎপাদন হয় স্বরূপকাঠিতে।

বাংলাদেশে প্রায় ১০০ উপরে পেয়ারার প্রজাতি আছে। আমদের দেশে বিভিন্ন জাতের পেয়ারার নাম- কাঞ্চননগর, চিনা, পাহাড়ি, ইপসা, মুকন্দপুরী, এলাহাবাদ, আঙ্গুর, সৈয়দী, এল-৪৯, চেরী, কাশি, কাজী, বারি পেয়ারা-২,বারি পেয়ারা-৩,বারি পেয়ারা- ৪, বাউ পেয়ারা-১(মিষ্টি), বাউ পেয়ারা-২(রাঙ্গা), বাউ পেয়ারা-৩(চৌধুরী), বাউ পেয়ারা-৪(আপেল), বাউ পেয়ারা-৫(ওভাল), বাউ পেয়ারা-৬(জেলি) জাতগুলো উল্লেখযোগ্য।

পেয়ারায় থাকা ভিটামিন-এ চোখের রাতকানা রোগ ও ছানি পরা থেকে রক্ষা করে, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন-বি৩ ও ভিটামিন-বি৬ আছে পেয়ারায় যা ব্রেনের রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। পেয়ারার ভিটামিন-সি ও আয়রন দেহের ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এবং শরীর সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পেয়ারা ডায়রিয়া, কফ, সর্দি-কাশি, হাঁটু-ব্যথা উপশমের ভাল ঔষধ।
পেয়ারা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধক
ভিটামিন সি, Quercetin(কোয়ারকেটিন), Lycopene(লাইকোপেন)এবং পলিফেনল আছে পেয়ারায় যা শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে তাই এই ফল মানব দেহে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমাতে সাহায্য করে এই পেয়ারা ফলটি। নিয়মিত পেয়ারা খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

পেয়ারার আঁশ দেহের চিনি শোষণ কমাতে সাহায্য করে তাই টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কম থাকে। পেয়ারায় ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকায় নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কম থাকে। পেয়ারা ফাইবার জাতীয় ফল বলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

পেয়ারা এইচডিএল নামক কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে এবং এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইড নামক খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্ট সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পেয়ারা। দেহের পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রেখে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে পেয়ারা। ফলটি রক্তে চর্বি জমতে বাঁধা প্রদান করে। পেয়ারায় আছে ফলিক এসিড যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই দরকার। পেয়ারায় আছে ম্যাগনেসিয়াম যা নার্ভ ও মাংসপেশিকে রিলাক্স রাখতে এবং কর্মশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমাতে সাহায্য করে পেয়ারা।

পেয়ারা পাতা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, এন্টিইনফ্লামেটরি গুণ সম্পূর্ণ এবং শক্তিশালী এন্টিব্যাক্টেরিয়াল ক্ষমতার অধিকারী; যার জন্য পেয়ারা পাতা দেহের জীবাণু ধ্বংস করতে যুদ্ধ করে ইনফেকশনের সাথে। পেয়ারার পাতা দাঁত ব্যথা, চুল পড়া ও গ্যাস্ট্রাইটিসের উপশমের জন্য ভাল ঔষধ। পেয়ারা পাতা পানি দিয়ে সিদ্ধ করে হাল্কা গরম অবস্থায় সিদ্ধ পানি কিছুক্ষণ মুখে রেখে রেখে কুলি করলে দাঁত ব্যথায় উপকার পাওয়া যায়। একইভাবে পাতা সিদ্ধ করা পানি খেলে গ্যাস্ট্রাইটিসের সমস্যায়ও ভাল ফলদায়ক।
পেয়ারা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধক




পেয়ারা পাতার ভিটামিন খুবই উপকারী সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য। পেয়ারা পাতা নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুল পড়া রোধ হয় এবং চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কয়েকটি পাতা পরিষ্কার করে পরিমাণ মত পানি দিয়ে প্রায় ২০-২৫ মিনিট সিদ্ধ করে সামান্য ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে মাথায় দিয়ে ঘণ্টা-খানেক পর ধুয়ে ফেলতে হবে তবে রাতে দিয়ে রাখলে ফল ভালো পাওয়া যায়। পেয়ারা পাতা চুল পড়া রোধ ও নতুন চুল গজাতে এবং চুলের গ্রন্থি-কোষ শক্ত করতে সাহায্য করে।

শীত ও উষ্ণ উভয় অঞ্চলেই পেয়ারা জন্মায়। পেয়ারা ভাল জন্মে হালকা রোদ, ছায়াযুক্ত ও আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে। পেয়ারা গাছ সাধারণত ৩-১০ মিটার লম্বা হয়ে থাকে, পাতা গাঢ় সবুজ; এগাছের মূল মাটির খুব বেশি গভীরে যায় না। পেয়ারা গাছ খুবই কষ্ট সহিষ্ণু উদ্ভিদ। ফুল উভয়লিঙ্গী, কীটপতঙ্গ ও বাতাসের মাধ্যমে পরাগায়ন সম্পন্ন হয়। পেয়ারা ফুলের প্রায় ৮০-৮৫% ফলে পরিণত হয় আর নানান প্রতিকুল পেরিয়ে পরিপক্ক হয় মাত্র ৫৫-৬৫% ফল। বীজ থেকে চারা হয় তবে বিভিন্ন কলমের মাধ্যমেও চারা তৈরি করে বংশবিস্তার করা হয়। সাধারণত দু-তিন বছরেই গাছে ফুল আসে।


(প্রোস্টেট ও স্তনের ছবি এবং তথ্য নেট ও বই থেকে সংগৃহীত)






No comments: