পয়ন্তপ Bd fruit’s feature and nutrition quality: আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণ পয়ন্তপ bd fruit’s feature and nutrition quality

August 24, 2019

আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণ

আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণআমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণ

আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণ


পুষ্টিকর আমড়ার সবচেয়ে বড় গুণ হল ক্যালরি কম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণ। আমড়ার পুষ্টিগুণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারসহ নানা মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে মানব দেহে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। ফ্রি-র‌্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাবকে নিউট্রালাইজ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।ফ্রি-র‌্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার উচিত যা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় আমড়া।

আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণ



আমড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ মুখরোচক ফল। পুষ্টি সমৃদ্ধ আমড়া জনপ্রিয় ফলের মধ্যে একটি। তিনটি আপেলের আর একটি আমড়ার পুষ্টি প্রায় সমান। আপেলের চেয়ে আমড়ায় ক্যালসিয়াম, আয়রন ও প্রোটিন বেশি। বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগ আমড়ার জন্য বিখ্যাত। সারা দেশেই ঝালকাঠির আমড়ার স্বাদের সুনাম আসছে, বিশেষ করে রাজাপুরের আমড়ার।

প্রতি ১০০ গ্রাম  আমড়ার ( Hog plum ) পুষ্টিগত মান
খাদ্যশক্তি
66 kcal
প্রোটিন
1.1  
ভিটামিন বি
10.28mg
ভিটামিন সি
92mg
রিবোফ্লোবিন
0.04mg
থায়ামিন
0.28mg
ক্যারোটিন
800 μg
ক্যালসিয়াম
55mg
শর্করা
15g
চর্বি
0.1g
লোহা
3.9mg
আয়রন
3.9mg  
খনিজ পদার্থ বা মিনারেলস
0.6 g
একক
μg = মাইক্রোগ্রামসমূহ,
mg = মিলিগ্রামসমূহ
IU = আন্তর্জাতিক এককসমূহ























আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণপুষ্টিকর আমড়ার সবচেয়ে বড় গুণ হল ক্যালরি কম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণ। আমড়ার পুষ্টিগুণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারসহ নানা মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে মানব দেহে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। ফ্রি-র‌্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাবকে নিউট্রালাইজ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।ফ্রি-র‌্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার উচিত যা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় আমড়া। দেহের অতিরিক্ত উত্তাপ নিরসনে আমড়া বেশ কার্যকর। আমড়া প্রায় ৯০% পানি, ৪-৫% কার্বোহাইড্রেট ও সামান্য পরিমাণ প্রোটিন থাকে।


বৈজ্ঞানিক নাম Spondias Magnifera (বা Spondias Pinnaata Kurz, Spondias Mombin) ইংরেজিতে Hog plum আমাদের দেশের স্থানীয় নাম আমড়া। ফলটি Anacardiaceae পরিবারভুক্ত। আমড়া ল্যাটিন আমেরিকার স্থানীয় ফল। তবে এই ফলটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে। পুষ্টিকর ফল আমড়া অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করে আমাদের দেশেও(বাংলাদেশে)। আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়ার, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশে এই ফল উৎপন্ন হয়। আমড়াকে গোল্ডেন অ্যাপেল বলা হয়।


আমড়া অম্ল স্বাদযুক্ত টক বা টক-মিষ্টি কচকচে স্বাদের ফল, কিছুটা কষ কষ ভাব আছে আর বীজ কাঁটাযুক্ত। আমড়ার আকার হাঁসের ডিমের মত। কাঁচা অবস্থায় আমড়া কালচে সবুজ রং-এর থাকে, পাকা আমড়া সামান্য হলুদ আভা ধারণ করে আর আমড়ার শ্বাস সাদা। ফলটি কাঁচা বা পাকা উভয় ভাবেই খাওয়া যায়, তবে আমাদের দেশে কাঁচা আমড়ার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। আচার, চাটনি, জেলি, মোরব্বা এবং আমড়া দিয়ে বিভিন্ন রকম টক তরকারি রান্না করা হয়।
আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণ
আমড়া কম-বেশি বার মাস-ই পাওয়া যায় তবে আমড়া বর্ষা মৌসুমের ফল। আমড়ার ভরা মৌসুম আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। আমাদের দেশে (বাংলাদেশের) অন্য ফলের তুলনায় আমড়া কিছুটা সস্তা, সহজলভ্য ও জনপ্রিয় পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। বাংলাদেশে আমড়া দুই প্রজাতির হয় বিলাতি আমড়া ও দেশি আমড়া। বিলাতি আমড়ার তুলনায় দেশি আমড়া ছোট ও বেশি টক।


বাংলাদেশের দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কম-বেশি আমড়া উৎপন্ন হলেও বরিশাল আমড়ার জন্য বিখ্যাত। আমড়া লাভজনক হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে জমির আইলে, পুকুর পাড়ে, খাল পাড়ে, কৃষি জমিতে কান্দি বা পাইকা কেটে, সরকারি রাস্তার ধারে, নদী কিনারা বা পাড়ে, বাড়ির আঙ্গিনায় প্রভৃতি স্থানে আমড়া চাষ করা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। সারাদেশে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের আমড়ার চাহিদা ও জনপ্রিয়তা। এই অঞ্চলের আমড়া এখন দেশের চাহিদা পূরণ করে চলে গেছে থাইল্যান্ড, নেপাল, দুবাই, ভুটান ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এছাড়াও আমড়া রফতানি শুরু হয়েছে লন্ডন। প্রক্রিয়াজাত আমড়া ও কাঁচা আমড়া চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে করে বিভিন্ন দেশে যায়।


দেশে ও দেশের বাইরে আমড়ার চাহিদা থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের চাষিদের বাণিজ্যিক ভাবে আমড়া চাষের প্রতি আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। আমড়া গাছ ছাড়া এই অঞ্চলে কোন বাড়ি পাওয়া যাবে না, প্রত্যেক বাড়িতেই দুই-চারটি আমড়া গাছ আছে। বর্তমানে বেতলা, ডুমুরিয়া, ডালুহার, ঝালকাঠির আমড়া বিক্রি হচ্ছে পিরোজপুরের আটঘর কুরিয়ানা ও ঝালকাঠির ভীমরুলী পানির ভাসমান বাজারে, ভাসমান বাজারের মধ্যে ভীমরুলী সবচেয়ে বড় বাজার। বাজার বসে সকালে, চাষিরা বাজার আসেন নৌকা বা ছোট ছোট ডিঙি দিয়ে। আড়তদাররা আমড়া কিনে নেন ট্রলারে করে, শুধু আমড়া না এই অঞ্চলের যাবতীয় ফল তাঁরাই কিনেন। সব কিছু মিলিয়ে এই অঞ্চলে জৌলুসই অন্যরকম।

আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণ



আমড়া সাধারণত সর্বত্রই পাওয়া যায়। হাটে-বাজারে, রাস্তা-ঘাটে, ভ্যানে, ফেরিওয়ালার কাছে এমনকি সব্জি বিক্রেতাদের কাছেও আমড়া পাওয়া যায়। আমড়া ফল নানা ভাবে বিক্রি করা হয়। আমড়া কেটে ছোট ছোট টুকরো করে এবং পাতলা পাতলা স্লাইস করে কেটে লবণ মরিচ কাসুন্দি দিয়ে ভর্তা বানিয়ে বিক্রি করা হয় স্কুল-কলেজের সামনে, বাস স্টেশনে, রাস্তা-ঘাটের বিভিন্ন স্থানে। হকাররা আমড়া ফুলের মত করে কেটে তাতে কাঠি গেঁথে লবণ-মরিচ একত্রে মিশানো গুড়া ছিটিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে আমড়া বিক্রি করে। একটু গরম পড়লেই আমড়া ভর্তা কিংবা ফুলের মত কাটা আমড়া চাহিদা অনেকগুণ বেড়ে যায়। আমড়া এভাবে খেতে পছন্দ করে ছোট-বড় সবাই। একটি আমড়া মানুষের দৈনন্দিন ভিটামিন-সি ৩৯%-৪৯% চাহিদা পূরণ করে থাকে।


আমড়ায় থাকা ভিটামিন-সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহে রক্ত জমাট বাঁধাসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং নখ, চুল ও ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে। আমড়ার খাদ্যআঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজম দূর করে, আমড়ার ক্যালসিয়াম হাড়ের সব ধরনের রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। কাঁচার আমড়া তুলনায় পাকা আমড়ায় সুগারের পরিমাণ বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিসে ভুক্তভোগী রোগীরা পাকা আমড়া কম খাওয়া বা না খাওয়াই ভাল।


মানব দেহের জন্য আয়রন খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন, কেননা মায়োগ্লোবিন ও হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য আয়রনের দরকার। হিমোগ্লোবিন থাকে লাল রক্ত কণিকায় আর মায়োগ্লোবিন থাকে মাংসপেশিতে। আমড়ার আয়রন হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন তৈরি ও বৃদ্ধি করে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া দূর করতে সাহায্য করে আর সারা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে হিমোগ্লোবিন। মায়োগ্লোবিন হিমোগ্লোবিনের মতোই আরেকটি উপাদান, মায়োগ্লোবিনের কারণে পেশির রোগ দেখা দেয় এবং বুক ব্যথায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে কখনো হার্ট অ্যাটাকের মত হতে পরে।
আমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণআমড়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে পরিপূর্ণ



আমড়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, রুচি বাড়ানোর সাথে সাথে ক্ষুধাও বাড়ায়, ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা, ওজন কমাতে সাহায্য করে, দাঁত ও মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করে, ঠাণ্ডা-কাশি নিরাময় করে, আমড়া কফনাশক ও পিত্তনাশক। আমড়ার খাদ্য অংশের তুলনা আমড়ার ফেলে দেয়া অংশ খোসায় ভিটামিন-সি ও ফাইবারের পরিমাণ বেশি, খোসা বা সিলকার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। তাই সার্বিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্যই আমড়া খাওয়া উচিত।


গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়ার অঞ্চল আমড়া চাষের জন্য উপযোগী।কলম পদ্ধতিতে বা বীজ মাধ্যমে আমড়ার বংশ বিস্তার করা হয়। আমড়া চাষের জন্য উপযুক্ত হল উঁচু ও উর্বর দো-আঁশ মাটি। আমড়া চাষের জন্য বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া খুবি উপযুক্ত। আমড়া গাছ প্রায় ২৫-৩০ ফুট উঁচু হয়ে থাকে। আমড়ার চারা রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যেই ফল আসা শুরু করে। এক নাগাড়ে প্রায় ১৫-২০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। পরে ধীরে ধীরে গাছ শুকিয়ে মারা যায়।


(পুষ্টি তথ্য বিভিন্ন বই ও নেট থেকে সংগৃহীত)





No comments: